অনার্স ও ডিগ্রি পাস কোর্স
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি বছরই ফাঁকা থাকছে কয়েক লাখ আসন
- আপলোড সময় : ০৬-১১-২০২৫ ০৮:৩৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ০৬-১১-২০২৫ ০৮:৩৩:৫৪ পূর্বাহ্ন
সুনামকণ্ঠ ডেস্ক ::
দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আইনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কৃষি, প্রকৌশল ও চিকিৎসা শিক্ষা প্রদানকারী কলেজ ছাড়া ¯œাতক ও ¯œাতকোত্তর শিক্ষা কর্মসূচি চালিয়ে নিতে সক্ষম কলেজগুলোকে অধিভুক্ত করার ক্ষমতা দেয়া হয়। বর্তমানে দেশের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীদের ৭১ দশমিক ৭৯ ভাগ শিক্ষার্থীই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোয় পড়ালেখা করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্য বলছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে প্রতি বছরই কয়েক লাখ আসন ফাঁকা থাকছে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে এর অধিভুক্ত কলেজের সংখ্যা ২ হাজার ২৫৭টি। এর মধ্যে সরকারি ২৬৪ এবং বেসরকারি ৬১৭টিসহ মোট ৮৮১টি কলেজে ¯œাতক (সম্মান) কোর্স রয়েছে। এসব কলেজে ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথমবর্ষে ভর্তিযোগ্য মোট আসন ছিল ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৮৫টি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত দেশের ১ হাজার ৯৬৯টি কলেজে ডিগ্রি (পাস কোর্স) পড়ানো হয়। এতে প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ৪ লাখ ২১ হাজার ৯৯০টি।
ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী- ২০১৪ সালে জাতীয় বিশ্ববদ্যিালয়ের ¯œাতক প্রথম বর্ষের আসন সংখ্যা ছিল ৬ লাখ ৮ হাজার ৪০৮টি। এর বিপরীতে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিল ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৯ জন। আসন শূন্য ছিল ৬৭ হাজার ৭৬৯টি। তবে এরপর থেকেই শূন্য আসনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১৮ সালে শূন্য আসনের সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৮১৭। ২০১৯ সালে শূন্য আসন ছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৭৪৩টি, ২০২০ সালে ২ লাখ ২২ হাজার ৪২৯, ২০২১ সালে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৮, ২০২২ সালে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৩৪৯ এবং ২০২৩ সালে ৩ লাখ ১৩ হাজার ২৪২টি আসন ফাঁকা ছিল।
জেলা পর্যায়ের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত বিভিন্ন কলেজের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি কলেজেই প্রায় এক-তৃতীয়াংশ আসন ফাঁকা থাকছে। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ সরকারি কলেজে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে অনার্সের তিনটি বিভাগে মোট আসন ছিল ১৮৫টি। সেখানে ভর্তি হয়েছে ১০৭ জন এবং আসন খালি ৭৮টি। এর মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ৭০ আসনের বিপরীতে ৬৮ জন, ম্যানেজমেন্ট বিভাগে ৬৫ আসনের বিপরীতে ১৫ এবং ইসলামী শিক্ষায় ৫০টি আসনের বিপরীতে ২৪ জন ভর্তি হয়েছেন।
এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, চারদিকে মানহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার পাশাপাশি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে যত্রতত্র তৈরি হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বাড়ির পাশের ওইসব মানহীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণ করায় উচ্চশিক্ষায় পিছিয়ে যাচ্ছে। অনার্সে সব বিভাগে কাক্সিক্ষত ছাত্র-ছাত্রী আসছে না।
শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আসন ফাঁকা থাকার অন্যতম কারণ চাহিদা বিবেচনা না করেই আসন সংখ্যা বৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় সুযোগ-সুবিধা ব্যতীত অনেক কলেজকে অধিভুক্ত করা। এছাড়া, শ্রমবাজারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে থাকা ও মানসম্মত শিক্ষা না থাকায়ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কমছে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. আলী জিন্নাহ বলেন, অনার্স-মাস্টার্স চালু করার জন্য অধিভুক্তির যে প্রক্রিয়া, সেটি তো আজকে চালু হয়নি। অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এটি আসলে যথাযথভাবে হয়নি। নিড অ্যাসেসমেন্ট ঠিকঠাক ছিল না। যার কারণে আসন ফাঁকা থাকছে। কোন কোন বিষয়ের বিপরীতে কতটি আসন দেয়া যায় সেটির একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। সেটি আসলে অনুসরণ করা হয়নি। আবার কিছু বিষয় আছে যেগুলোর চাহিদা কম, সেগুলোতে কেউ ভর্তিই হয় না। এছাড়া বেকারত্বও একটি কারণ। এসব কারণে মূলত আসন ফাঁকা থাকছে। এর থেকে উত্তরণের উপায় হলো শিক্ষাকে কর্মের সঙ্গে যুক্ত করা। যাতে কেউ বেকার না থাকে। প্রত্যেকের জন্য একটি কারিগরি বা বৃত্তিমূলক কোর্সের ব্যবস্থা করা। যাতে তারা দেশে বা দেশের বাইরে গিয়ে অন্তত তাদের এ পড়াশোনাকে কাজে লাগাতে পারে।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) ২০২৪ সালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থিত কলেজগুলো থেকে ¯œাতক শিক্ষার্থীর ২৮ দশমিক ২৪ শতাংশই বেকার। বাকিদের মধ্যে অধিকাংশই স্বল্প আয়ের চাকরিতে নিযুক্ত। গবেষণায় সারা দেশের ৬১টি কলেজের ১ হাজার ৩৪০ ¯œাতক, অধ্যয়নরত ৬৭০ শিক্ষার্থী, ৬১ অধ্যক্ষ ও ১০০ নিয়োগদাতার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণায় উঠে আসে, ৪৩ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই সরকারি চাকরি করতে আগ্রহী। যারা কর্মে নিয়োজিত তাদের প্রায় ৩৬ শতাংশ শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত। অনেকেই অফিসার বা অ্যাসিস্ট্যান্ট অফিসার পদে কর্মরত। উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন ১৬ দশমিক ২৪ শতাংশ ¯œাতক।
ওই গবেষণায় দেখা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোয় বিজ্ঞানের তুলনায় ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিকের শিক্ষার্থী বেশি। এর মধ্যে বিএ (পাস কোর্স), পলিটিক্যাল সায়েন্স, লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, বাংলা ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের বেকারত্বের হার বেশি। তবে ইংরেজি, অর্থনীতি, অ্যাকাউন্টিং, সমাজবিজ্ঞান এবং ফাইন্যান্স ও ব্যাংকিং থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের তেমন বেকার থাকতে হয় না। গবেষণায় কলেজগুলোর মানের ঘাটতি, শিক্ষার্থীদের কম উপস্থিতি, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার অভাব এবং চাকরির বাজারমুখী শিক্ষার অভাব সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে আসে।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম আমানুল্লাহ বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যখন আসন বৃদ্ধি করা হয়েছিল তখন চাহিদার বিষয়টি সঠিকভাবে চিন্তা না করেই বাড়ানো হয়েছিল এবং পরিকল্পনার ঘাটতি ছিল। দায়িত্ব গ্রহণের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের শ্রমবাজারের উপযোগী করে গড়ে তোলার জন্য আমরা বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। এখন পর্যন্ত আমরা যেসব উদ্যোগ নিয়েছি তার মধ্যে ৮০ শতাংশই শিক্ষার মান বৃদ্ধির সঙ্গে সংযুক্ত। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার মান নিয়ে অভিযোগ আছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে আমরা মনিটরিং জোরদার করেছি। যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী পাচ্ছে না এরই মধ্যে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং চিঠিও দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারলে তাদের অধিভুক্তিও বাতিল হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, আসন শূন্য থাকায় আমাদেরও সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আমাদের প্রতি বছরই বাজেট ঘাটতি বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে আমাদের কারিকুলামের উন্নয়ন, আউটকাম বেজড এডুকেশন নিশ্চিত করা ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সংযোগ স্থাপনসহ বিভিন্ন পরিকল্পনা আছে। কিন্তু সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট সংকুলানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। - বণিক বার্তা
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সুনামকণ্ঠ